.৫ আগস্ট ২০২৪ দুপুর ১২ টার আগে ও আমাদের কারো ই জানা ছিল না আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছি। নতুন এই বাংলাদেশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ কল্পনা ও করার শাহস পায় নি আওয়ামীলীগ বিহিন নতুন এক বাংলাদেশের। এই দেশের বিগত ১৫ বছরের শাসন আমল কে কি ভাবে উপভোগ করেছেন? প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আপনি যদি আওয়ামীলীগ এর সাপোটার না হয়ে থাকেন তা হলে দিতে হলে আপনাকে অনেক কথা দিয়ে দিতে হবে। আর আওয়ামী সমর্থক হলে হয়তো এক কথায় উত্তর দিয়ে দিতে পারবেন।
নতুন ভোর: ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐক্যজোট ও ২০২৪ সালের অভুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশ
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সাক্ষী হলো। বছরের পর বছর ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন, দুর্নীতি, নিপীড়ন আর বাক-স্বাধীনতার হরণে জর্জরিত মানুষ যখন দিশেহারা, তখনই ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ জনতা একতাবদ্ধ হয়ে গড়ে তোলে অভূতপূর্ব এক আন্দোলন। এই গণঅভ্যুত্থান শুধু একটি সরকার পতন নয়, বরং একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে — যে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে সাম্য, মানবিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার।
ফ্যাসিবাদের শেষ দিন
দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশের মৌলিক মানবাধিকার বিপন্ন ছিল। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত, বিরোধী কণ্ঠ রুদ্ধ, বিচারব্যবস্থা ছিল প্রভাবিত। দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর বেকারত্বে মানুষ যখন ক্ষুব্ধ, তখনই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে আন্দোলনের সূচনা হয়। ছাত্ররা রাজপথে নামে ‘গণতন্ত্র ফেরাও, মানবাধিকার রক্ষা করো’ স্লোগান নিয়ে। শ্রমিকরা যোগ দেয় ‘শ্রমের ন্যায্য মূল্য চাই, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ করো’ দাবিতে। আর সাধারণ জনতা নেমে আসে তাদের পাশে।
ঐক্যের জয়
এই আন্দোলনের অনন্য দিক ছিল সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্য। শহর থেকে গ্রাম, ছাত্র থেকে কৃষক, নারী থেকে সংখ্যালঘু — সবাই একই পতাকা, একই স্লোগানে এগিয়ে আসে। ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ঢাকার শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা — দেশজুড়ে লাখো মানুষ একযোগে অবস্থান নেয়। প্রশাসন ভেঙে পড়ে, দমন-পীড়ন থামিয়ে দিয়ে মানুষ নিজেদের দাবি আদায় করে নেয়।
নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার। যে সরকার দেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন করে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এবং নতুন সংবিধান রচনার উদ্যোগ নেয়। নতুন বাংলাদেশ গড়ার এই পথচলায় সর্বাগ্রে গুরুত্ব পায়:
-
গণতন্ত্রের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা
-
মানবাধিকার সংরক্ষণ
-
শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও কর্মপরিবেশ
-
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য উন্মুক্তকরণ
-
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠন
ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি
এই নতুন বাংলাদেশ শুধু একটি সরকার বদল নয়, বরং একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লব। এখানে ক্ষমতা জনগণের, যেখানে রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হবে নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করা।
এই অভ্যুত্থান স্মরণ করিয়ে দিয়েছে — যখন ছাত্র, শ্রমিক, জনতা এক হয়, তখন কোনো ফ্যাসিবাদই টিকে থাকতে পারে না। এই বাংলাদেশ নতুন ভোরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে নির্ভয়ে, লেখক লিখতে পারবে মুক্ত মনে, শ্রমিক পাবে তার পরিশ্রমের সঠিক মূল্য আর ছাত্র খুঁজে পাবে এক উদার গণতান্ত্রিক সমাজ।
সেই প্রত্যাশায় বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন