সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কার কাজ কে করে?

 বাংলাদেশের সরকারী আধা সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য, আউটসোর্সিং ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একক ভূমিকা: কতটা শ্রমবান্ধব ও আইনসম্মত?  


বাংলাদেশের শ্রমবাজার দিন দিন বহুমাত্রিক হচ্ছে। শুধু উৎপাদনশীল খাত নয়, বরং ডিজিটাল সেক্টর, আউটসোর্সিং, এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা শ্রমিকদের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই শ্রমিকদের অধিকারের সুরক্ষা এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করা সময়ের দাবি। তবে ২০১৮ সালে একবার ও ২০২৫ সালের সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে,সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য,  আউটসোর্সিং ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এককভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করছে, যা প্রশ্ন তুলছে — এটি কতটা শ্রমবান্ধব এবং আইনগতভাবে কতটা যৌক্তিক?  




 শ্রম সংক্রান্ত নীতিমালার ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম ও দায়িত্ব বিভাজন  


বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী, দেশের শ্রমবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নের মূল দায়িত্ব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের। শ্রমিকদের মজুরি, কর্মঘণ্টা, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা, ছুটি, নিরাপত্তা ইত্যাদি নির্ধারণ করে মূলত শ্রমমন্ত্রণালয়।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ এবং অর্থায়ন নিশ্চিত করা। মজুরি বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রেও শ্রম মন্ত্রণালয় নেতৃত্ব দেয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ বা বাজেটary impact বিবেচনা করে মতামত প্রদান করে।  


 আউটসোর্সিং ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক খাতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের একক নীতিমালার প্রশ্ন থেকে যায়?


বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় সরাসরি আউটসোর্সিং ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন, কত টাকা মজুরি দেওয়া হবে, কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে, কীভাবে ছাঁটাই হবে — এসব বিষয় অর্থ বিভাগ থেকেই ঠিক করা হচ্ছে।  


এই পদ্ধতির প্রধান সমস্যা হলো:


* শ্রমিকদের স্বার্থ উপেক্ষা হওয়ার ঝুঁকি:  

অর্থ মন্ত্রণালয় সাধারণত অর্থনৈতিক দিক ও সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়। এতে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার এবং কল্যাণের দিকটি দ্বিতীয়িক হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।  


*  শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক:  

বাংলাদেশ ৮টি ILO কনভেনশন অনুমোদন করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই দায়িত্ব শ্রম মন্ত্রণালয়ের। অথচ অর্থ মন্ত্রণালয় এককভাবে নীতিমালা করলে তা ILO নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।  


*  নীতিমালা বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা:  

শ্রমিকদের মজুরি ঠিক করবে অর্থ মন্ত্রণালয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করবে শ্রম মন্ত্রণালয় — এতে প্রশাসনিক জটিলতা এবং দ্বৈত নীতিমালার ঝুঁকি তৈরি হয়।  


*  শ্রমবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের ঘাটতি:  

শ্রমিকদের জীবনমান, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা শ্রমবান্ধব নীতিমালার অংশ। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এসব দিক বিবেচনা না করে কেবল ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলে শ্রমিকরা বঞ্চিত হবে।  



 আইনগত দৃষ্টিকোণ  


বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী, শ্রম সম্পর্কিত সব নীতিমালা, বিধিমালা ও মজুরি বোর্ড গঠনের ক্ষমতা শ্রম মন্ত্রণালয়ের। অর্থ মন্ত্রণালয় এতে মতামত দিতে পারে, তবে নীতিমালা প্রণয়নের একক কর্তৃত্ব নেই।  


অর্থ মন্ত্রণালয় এককভাবে শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা করলে তা শ্রম আইন এবং প্রশাসনিক কাঠামোর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ফলে শ্রমিকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে আদালত বা শ্রম আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।  


এই বিষয়ে করণীয় কি?


* যথাযথ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে নীতিমালা প্রণয়ন:  

শ্রম মন্ত্রণালয়কে আউটসোর্সিং এবং দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।  


* অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরামর্শক ও অর্থায়নকারী ভূমিকায় রাখা:  

অর্থ মন্ত্রণালয় আর্থিক সক্ষমতা বিশ্লেষণ ও বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে মতামত দিতে পারে।  


* শ্রমিক প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা:  

নীতিমালা প্রণয়নে শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ ও ILO প্রতিনিধি রাখা জরুরি।  


* বিদ্যমান আইনি কাঠামো অনুযায়ী প্রক্রিয়া চালানো:  

শ্রম আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মজুরি বোর্ড গঠন ও শ্রমবান্ধব নীতিমালা করা উচিত।  


 

শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হলে বাংলাদেশের সরকারী আধা সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য, আউটসোর্সিং ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একক ভূমিকা থাকলে, আউটসোর্সিং ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের এককভাবে নীতিমালা প্রণয়ন কোনোভাবেই শ্রমবান্ধব বা আইনসম্মত নয়। এ ধরনের উদ্যোগ শ্রমিকদের অধিকারের পরিপন্থী এবং শ্রমবাজারে বৈষম্য তৈরি করতে পারে। তাই শ্রম মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই শ্রমবান্ধব, সময়োপযোগী এবং আইনের আওতায় নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি।  


২০১৮ সালে আউটসোর্সিং নীতিমালা প্রনয়নের পর থেকে ই এই নীতিমালার আওতায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত প্রত্যেক টা কর্মচারীদের সাথে হওয়া অন্যায় অবিচার বৈষম্য ছাড়া ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির গল্প আছে  কয়েক শতাদিক,২০২৫ সালে আউটসোর্সিং নীতিমালা সংস্কার করে সে অনিয়ম আর দুর্নীতির গল্প তৈরি হবে।

বৈষম্য মুক্ত না যুক্ত হবে বলে মনে করছে

বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কার্য বিবরনির সার সংকেপ।

  ✊ বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ: আদর্শ ও কার্য বিবরণী বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আপামর আউটসোর্সিং দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ও প্রকল্প খাতে কর্মরত সকল শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় ও কর্মপরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত একটি অরাজনৈতিক, অপ্রতিষ্ঠানিক এবং কল্যাণমুখী সংগঠন। আমাদের মূল আদর্শ হলো সকলের কল্যাণে কাজ করা । ব্যক্তিস্বার্থ নয় — বরং আউটসোর্সিং দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ও প্রকল্প খাতে কর্মরত সকল সহকর্মীর ন্যায্য দাবী আদায় এবং পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য। 🎯 আমাদের কার্য বিবরণী: দাবী বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখা। যেকোনো সংগঠন বা ব্যক্তির সাথে আলোচনা, পরামর্শ গ্রহণ ও সাহায্য নেওয়া , যাতে আমাদের আন্দোলন আরও সুসংগঠিত এবং কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়। শ্রমিকদের পেশাগত মর্যাদা, ন্যায্য বেতন কাঠামো এবং চাকরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবী পেশ করা। বিশেষ করে ঠিকাদার প্রথা বাতিল করে স্ব স্ব প্রতিস্টানের কর্মচারী হ...

সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসুন

সারা বাংলাদেশের সকল সরকারি আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে আউটসোর্সিং দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ও প্রকল্পে কর্মরত প্রত্যেকে ই নানান ধরনের বৈষম্য চাকরির নিরাপত্তাহীনতা ও শোষণের স্বীকার হয়েছেন। তবে যে বা যারা এই চাকরি করতে গিয়ে অনেক বেশি  সমস্যায় পড়েছেন,চাকরি হারিয়েছেন,বেতন বকেয়া আছে,টাকার বিনিময়ে চাকরি নিয়েছেন, তাদের উচিত একসঙ্গে সামনে থেকে এগিয়ে আসা। যে কোনো আন্দোলন এবং দাবির বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব, যখন ভুক্তভোগীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। কেননা, যে ব্যক্তি সমস্যার সম্মুখীন হয়, সেই সবচেয়ে বেশি তার সমাধানের পথ খুঁজতে আগ্রহী ও মরিয়া থাকে। শুধু মাত্র একটি সংগঠন যদি এককভাবে সমস্যার মোকাবিলা করতে চেষ্টা চালিয়ে যায়, তবে তা হয়তো সাময়িক সমাধান দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু একতাবদ্ধ হলে, প্রতিবাদি কণ্ঠ শক্তিশালী হবে, দাবি আদায়ের পথ সুগম হবে এবং ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা সহজ হবে। তাই দেরি না করে, যারা এই চাকরির বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত, তারা সামনে আসুন। সকলে মিলে একসঙ্গে নিজেদের অধিকার ও ন্যায়ের দাবিতে সোচ্চার হয়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হতে পারেন। একসঙ্গে প...

সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ:

সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ: সমাজ গঠনের অপরিহার্য উপাদান সহনশীল আচরণ আর ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষা করে চলা নিঃসন্দেহে কঠিন, তবে তা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং মহৎকর্ম, তা বোঝা যায় যখন আমরা একত্রে কোনো বড় লক্ষ্য অর্জনের পথে হাঁটি। ব্যক্তি বা সমাজ — উভয়ের উন্নতির জন্য এই গুণদ্বয় অপরিহার্য। সহনশীলতা মানে শুধু অন্যের ভুলত্রুটি সহ্য করা নয়, বরং ভিন্ন মত, বিশ্বাস ও অবস্থানকে সম্মান করা। প্রতিটি মানুষের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুভূতির ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। এই ভিন্নতাকে সম্মান জানিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত মানবিকতা। অন্যদিকে, ভ্রাতৃত্ববোধ সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করে। এটি মানুষকে এক সুতোয় গেঁথে রাখে, বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহানুভূতির বন্ধন গড়ে তোলে। যখন আমরা কোনো লক্ষ্য সামনে রেখে একত্রে কাজ করতে চাই, তখন এই ভ্রাতৃত্ববোধই আমাদের একতাবদ্ধ রাখে এবং যেকোনো সংকট মোকাবিলায় সাহস যোগায়। আজকের সমাজে মতপার্থক্য, দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা বা বিশ্বাসের বৈচিত্র্য থাকবেই। এসব পার্থক্যের মাঝেও সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ ধরে রাখা সত্যিই চ্যালেঞ্জের। তবে এই গুণ অর্জন করতে পারলে তা সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে শান্তি,...