বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

বাংলাদেশের সবার প্রত্যাশা

 দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি

অত্যন্ত লজ্জাজনক হলেও সত্য — আজ বিশ্ববাসী জানে যে সততার দিক দিয়ে আমরা এখনও স্বচ্ছতার শীর্ষে যেতে পারিনি। একাধিক আন্তর্জাতিক জরিপ ও প্রতিবেদন আমাদের দেশের দুর্নীতির চিত্রকে বারবার তুলে ধরেছে। এই বাস্তবতা শুধু আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে না, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক সমাজও চায়, বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক। কারণ তারা আমাদের দেশকে একটি সম্ভাবনাময় বাজার ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ হিসেবে দেখছে। যদি আমরা দুর্নীতির শিকল ছিঁড়ে এগিয়ে যেতে পারি, তবে বৈদেশিক বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, তেমনি উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং পরবর্তী ধাপে উন্নত দেশের কাতারে উঠে যাওয়াও সময়ের ব্যাপার হবে।



ক্ষমতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতি

রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ব্যক্তিরাই দীর্ঘদিন ধরে শাসনের আড়ালে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে আসছেন। সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা বলে যারা ক্ষমতায় আসে, তারা এক সময় ক্ষমতার স্বাদে বুঁদ হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র পরিচালনার নামে গড়ে তোলে নিজেদের আখের গোছানোর এক অপকৌশল। ফলে প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতরে ঢুকে পড়ে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার শিকড়।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই ক্ষমতাকেন্দ্রিক ব্যক্তিরাই দেশের সম্পদ লুটপাট করে, দুর্নীতির জাল বিস্তার করে সমাজকে দিন দিন দুর্বল করে তুলছে। তারা জনগণের অধিকার, ন্যায্য দাবি, এবং স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে কেবল নিজের অবস্থান মজবুত করতে ব্যস্ত। ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ছে দুর্বল, ন্যায়বিচার হয়েছে উপেক্ষিত এবং সমাজে বৈষম্যের বেড়াজাল দিন দিন আরও ঘনিভূত হয়েছে।
বিগত ১৭ বছর জুড়ে তো মানুষের ভোটাধিকার কথা বলার স্বাধীনতা এমনকি আওয়ামি মতাদর্শের বাহিরে কেউ কথা বলতে পারেন নি।
ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির এই ধারাবাহিকতা ভেঙে দিয়ে সত্যিকারের গণতন্ত্র ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই যখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়ায়। নাহলে এই অন্ধকার চক্র থেকে দেশকে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে। জনগণের সচেতনতা এবং সাহসিক উচ্চারণই পারে এই অন্যায়কে রুখে দিতে।
সেই চিন্তা চেতনার কথা ভেবে ই বাংলাদেশের জনগনের স্বরনিয় বিপ্লবী উদ্যোগ।
২০২৪ এর জুলাই মাসের শুরুতে কোটা বিরুদি আন্দোলন শুরু হলেও অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তা ছাত্র শ্রমিক জনতার সম্মিলিত স্বতঃস্পুর্ত অংশগ্রনে আন্দোলনের গতি বাড়তে থাকে। ৩৬ দিনের এক বিপ্লবী অধ্যায়। হাজার ও তরুণ সেই সাথে অনেক অবুঝ শিশুদের কে নিজের প্রান বিলিয়ে দিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ (শেখ হাসিনার)পালিয়ে যাওয়ার মধ্য  দিয়ে অবসান হয় দেড় যুগের ও বেশী সময় ধরে চলা ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যাবস্থার।
নতুন করে এদেশের আপামর জনগণ স্বপ্ন দেখে নতুন এক বাংলাদেশের। ৮ আগস্ট  অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন বাংলাদেশের প্রথম শান্তিতে নোবেল বিজয়ি ডঃ মোঃ ইউনুস।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার এক বক্তব্যে বলেছিলেন, "দুর্নীতিকে নির্মূল করাই আমাদের অগ্রাধিকার। সততা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।" তার সেই উদ্যোগ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াস আজ অনেকের মনে রেখাপাত করে আছে। যদিও নানা প্রতিকূলতায় সেই প্রচেষ্টা পুরোপুরি এখন ও সফল হয়নি, তবে তার দেখানো পথ ধরে আজ  আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।



দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের শুধু সরকার বা প্রশাসনের দিকেই তাকিয়ে থাকলে চলবে না। প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশ হতে পারে একটি স্বচ্ছ, সৎ ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র।

আজকের বাংলাদেশ তরুণ, উদ্যমী ও সম্ভাবনাময়। আসুন, আমরা সবাই মিলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও সম্মানজনক দেশ গড়ি।
এদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসুক।২০২৪ এর গন অভুত্যানের আকাঙ্ক্ষা ও পরিবর্তনের প্রত্যাশা
রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, বরং মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব। আমাদের সমাজে বহুদিন ধরেই এক ধরনের অনিশ্চয়তা, বৈষম্য আর স্বার্থপরতার শাসন চলছে। সময় এসেছে বদলে দেওয়ার। প্রয়োজন ন্যায়, নীতি আর মানবিক গুণাবলির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক নতুন রাজনৈতিক ধারা — যেখানে গনতন্ত্রের চর্চা হবে অবিচল, মানুষের কণ্ঠস্বর হবে মুক্ত।

মানুষ তার ন্যায্য নাগরিক অধিকার ফিরে পাক। মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সুবিচার আর নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা হোক সবার জন্য।

একটি সাম্যের সমাজ গড়ে উঠুক, যেখানে ধনী-গরিব, ক্ষমতাবান-নির্ভরশীল, শহর-গ্রাম — কারও মাঝে বৈষম্য থাকবে না। স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব অটুট থাকুক, দেশের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপোস নয়।

রাজনীতি হোক মানুষের কল্যাণে, সত্য আর ন্যায়ের পক্ষে। দেশ হোক এক উদার, মানবিক, গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নমুখী রাষ্ট্র।

আসুন আমরা প্রত্যেকে আমাদের অবস্থান থেকে এই পরিবর্তনের সপক্ষে কণ্ঠ মেলাই, সচেতন হই এবং এক নতুন সম্ভাবনার পথ তৈরি করি।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন