সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

স্বাধীনতা ২.০

 সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম ও রহমতুল্লাহ। 

জুলাই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র জনতার গন আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধান মন্ত্রি

শেখ হাসিনা। বিগত ১৫ বছরের ও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এই নারি এভাবে দেশ ছেড়ে পালাবেন

এই কথা ভাবা ত দূরে থাক আমরা কেউ স্বপ্নে ও দেখিনি। দেশের প্রশাসনের কেন্দ্র বিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত থাকার সুবাধে খুব কাছে থেকে দেখে ই কথা গুলো লিখছি। ৪ আগস্ট রোজ রবি বার সন্দ্যার পরে ও তখন আমি অফিসে। সচিবালয়ের বিল্ডিং গুলোতে ১৫ আগস্টের শোক দিবসের উপলক্ষে বিশাল বিশাল ব্যানার ফেস্টুন লাগানো হচ্ছে। এই বেনার ফেস্টুন লাগানো টা নতুন ছিল না। এই কাজ গুলো ছিল গত ১৫ বছরের নিয়মিত রুটিন। প্রত্যেক বছর আগস্ট মাস শুরু হলে পরে প্রত্যেক মন্ত্রনালের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে খুব গুরুত্ব পূর্ণ কাজ হিসাবে এই ব্যানার  প্রদর্শনী ছিল। তাদের এই কাজের ক্ষেত্রে খুব দায়িত্বশীল এবং আন্তরিকতা দেখেছি। কিন্তু তাদের নিজের অফিসের কাজের জন্য এতটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে দেখিনি।প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য থাকে আগস্টের শোক দিবস নিয়ে কতটা সুন্দর ভাবে প্রদর্শনী ফুটিয়ে তোলা যায় সে প্রতিজোগিতা।

৫ আগস্টে শেখ হাসিনার পালানো এবং ছাত্র জনতার অবিস্মরণীয় বিজয় হবার পরে বংগভবন সহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্তাপনায় জনগণ প্রবেশ করলেও সচিবালয়ে কেউ প্রবেশ করে নি।নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনী অফিসার রা রিকুয়েষ্ট করে জনগণকে আটকানোর পাশাপাশি আনসার পুলিশের সাহায্যে খুব দ্রুততার সাথে ফ্যাসিস্ট সরকারের তোশামোদের জন্য জত প্রকার বেনার ফেস্টুন ছিল তা নামিয়ে ফেলেন।



 আমি  ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ফ্যাসিবাদের পতন ও স্বাধীনতার দ্বিতীয় অধ্যায় নিয়ে। অল্প কিছু লিখতে চেষ্টা করছি মাত্র। 

 *২০২৪: ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও স্বাধীনতার দ্বিতীয় অধ্যায়*

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট — এই সময়টা শুধু ক্যালেন্ডারের কয়েকটি মাস নয়, এটি ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লেখা এক অগ্নিঝরা অধ্যায়। এই সময়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আবারও প্রমাণ করেছিল, এই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় রাজপথে, সংগ্রামে, আন্দোলনে।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে চলছিল একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। গণতন্ত্র ছিল কাগজে-কলমে, বাকস্বাধীনতা ছিল সীমাবদ্ধ, ভোটের অধিকার ছিল প্রহসন। মানুষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছিল, সাংবাদিকতা নিস্পেষিত, বিরোধী মত দমন করা হচ্ছিল। ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশকে পরিণত করেছিল এক ভয়ের কারাগারে।

ঠিক তখনই ছাত্র-জনতা জেগে উঠল। জুলাই মাসের শুরুতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে, রাজপথে ছড়িয়ে পড়তে থাকে প্রতিবাদের আগুন। “ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক” শ্লোগানে মুখরিত হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল। আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস।

ছাত্রদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী — এক অনন্য ঐক্য তৈরি হয় রাজপথে। আন্দোলন দমন করতে শাসকগোষ্ঠী আবারও দমনপীড়নের পথ বেছে নেয়। তবে ইতিহাস সাক্ষী, এই জাতি কখনও মাথা নত করেনি।

 *অবশেষে ২০২৪-এর ৫ আগস্টে পতন ঘটে ফ্যাসিবাদী শাসনের।*

শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের চাপ, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ আর দেশের আপামর মানুষের দৃঢ় প্রত্যয়ে বিজয় আসে। স্বৈরতন্ত্রের শৃঙ্খল ভেঙে রচিত হয় *স্বাধীনতার দ্বিতীয় অধ্যায়*।


প্রথমবার আমরা ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিলাম পাকিস্তানি দখলদারদের হাত থেকে। এবার দেশের অভ্যন্তরে জন্ম নেওয়া দখলদার ও শোষকদের হাত থেকে মুক্তির সংগ্রাম ছিল এটি। এই অধ্যায় শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নতুন যাত্রা।

 *এই অধ্যায়ের শিক্ষা:*

* দেশের মালিক দেশের মানুষ

* ফ্যাসিবাদ যেখানেই হোক, তা প্রতিরোধ করতে হবে

* ছাত্র-জনতা ঐক্যই সকল আন্দোলনের মূল শক্তি

* রাজপথই পরিবর্তনের আসল ঠিকানা




আজ, এই ঐতিহাসিক আন্দোলন থেকে আমরা শিখি কিভাবে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হয়। আমাদের সামনে এখন নতুন দায়িত্ব — এই অর্জিত স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠন করা।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন