আমাদের নবি হযরত মোহাম্মদ সাঃ জন্ম গত ভাবে ন্যায় পরায়ন ইনসাফ ওয়ালা মানুষ। আবার ইসলামের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইনসাফ তথা ন্যায় পরায়নতা। আপনি আমি ততক্ষন নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবি করতে পারবো না যতক্ষণ আমি আমার জন্য যা পছন্দ করি আমার ভাইয়ের জন্য ও ঠিক তা ই পছন্দ করবো।
ইসলামের আরেক শর্ত আপনাকে আমাকে আমানতদার হতে হবে। আর আমাদের নবি হযরত মোহাম্মদ সাঃ ছিলেন জন্ম গত ভাবে আমানতদার। আমার নবির কথা বলার শব্দ চয়ন ছিল জন্মগত ভাবে অত্যান্ত সুন্দর সাভলিল ছিল।
ইনসাফ: ইসলামের মূল শিক্ষা
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্মগতভাবেই ছিলেন ন্যায়পরায়ণ ও ইনসাফপ্রিয় একজন মানুষ। তিনি নিজের জীবনে কখনোই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি, বরং সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকেছেন। তাঁর এই চারিত্রিক গুণাবলি ছিলো ইসলাম ধর্মের বুনিয়াদি শিক্ষা—ইনসাফ বা ন্যায়পরায়ণতার বাস্তব রূপ।
ইসলামে ইনসাফ একটি মূল স্তম্ভের মতো। আল্লাহতায়ালা কুরআনুল কারিমে বারবার ইনসাফের আদেশ দিয়েছেন। একজন প্রকৃত মুসলিম হতে হলে শুধু নামাজ, রোজা, হজ বা যাকাত আদায় করাই যথেষ্ট নয়; বরং আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাও ফরজ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর একটি হাদিসে এসেছে—“তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্যও তা-ই চাও, যা তোমরা নিজেদের জন্য চাও।" এই শিক্ষাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা তখনই প্রকৃত মুসলিম হতে পারবো, যখন নিজের সুবিধার মতো অন্যের সুবিধাকেও গুরুত্ব দিবো।
আজকের সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা এবং নিজের আচরণে ইনসাফ কায়েম করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। আমাদের জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব জায়গায় শান্তি ফিরে আসবে।
নবী হবার আগেই প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উত্তম চরিত্র
প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের নবী হওয়ার বহু আগেই ছিলেন একজন অতুলনীয় চরিত্রবান মানুষ। তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যবাদিতা ও মানুষের প্রতি দয়া-অনুভূতি এমন পর্যায়ে ছিল যে, পুরো আরববাসী তাঁকে 'আল-আমিন' (বিশ্বাসযোগ্য) ও 'আস-সাদিক' (সত্যবাদী) উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
তৎকালীন আরব সমাজে যখন অসত্য, জুলুম ও অনাচার ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী, তখনও হযরত মোহাম্মদ (সা.) ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি মিথ্যা বলতেন না, কারো সঙ্গে প্রতারণা করতেন না, কারো হক নষ্ট করতেন না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও তিনি ছিলেন পরিপূর্ণভাবে সততার আদর্শ।
তাঁর চরিত্রের এমন দৃঢ়তা ও আস্থা এতটাই গভীর ছিল যে, মানুষ নিজের মূল্যবান সম্পদ তাঁর হেফাজতে রেখে নিশ্চিন্ত থাকত। কুরাইশ গোত্রের নেতারা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পরস্পর বিরোধিতায় লিপ্ত হলেও, যে কোনো বিবাদ মীমাংসায় তাঁর বিচার মানতে দ্বিধা করত না। কারণ, সবাই জানত তিনি কখনো পক্ষপাতিত্ব করবেন না।
এমনকি নবুয়তের আগেই তিনি সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে অংশ নিয়েছেন—যেমন 'হিলফুল ফুজুল' নামক ন্যায়ের পক্ষে গঠিত চুক্তিতে অংশগ্রহণ করে তিনি নিপীড়িতের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন।
এই সব গুণাবলি ছিল তাঁর নবুয়তের প্রস্তুতির অংশ—আল্লাহ তা’আলা তাঁকে নবুয়তের দায়িত্বের জন্য এমনভাবে গঠন করেছিলেন যেন তিনি মানব জাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ রূপে উপস্থাপিত হতে পারেন।
আসলে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চরিত্র এমন এক উদাহরণ যা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। আল্লাহর প্রিয় নবী ছিলেন মানবিক গুণাবলির শ্রেষ্ঠ প্রতিচ্ছবি—নবী হওয়ার আগেই যার প্রমাণ দিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিত্ব, কর্ম ও আচরণে।